লজ্জা
লেখিকা: তাসলিমা নাসরিন
প্রকাশনায়: আনন্দ পাবলিশার্স
দেশভাগের পরবর্তী পর্যায়ে যে রূপে একাধিকবার অশান্ত পরিবেশের সৃষ্টি হতে থাকে এপার এবং ওপার বাংলা জুড়ে, সেইরকমই এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উদ্ভব হয়েছিল বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার পরে । এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই জায়গায় জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়ে যায় । স্বাধীন বাংলাদেশের অবস্থাও খুব করুন হতে থাকে ।বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ইসলাম সম্প্রদায়ের মানুষেরা হিন্দুদের উপরে নৃশংসভাবে অত্যাচার চালাতে থাকে।হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট যটরকমভাবে সম্ভব, তাঁরা এক কথায় বাংলাদেশ-কে হিন্দুমুক্ত করতে চেষ্টা করেছিলো । এমনই এক ভয়াবহ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে লেখিকা দেখিয়েছেন যে স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাসকারী এক বাঙালী পরিবার, যার অভিভাবক ড. সুধাময়, এছাড়া ও তাঁর স্ত্রী কিরনময়ী, পুত্র সুরঞ্জন এবং কন্যা মায়া । বাঙালী পরিবার হলেও, ধর্ম-কে উপেক্ষা করেই এই পরিবার আজীবন দিনযাপন করে চলেছিলো । বিশেষত, পরিবারের দুই পুরুষ সুধাময় ও সুরঞ্জন ধর্ম-কে ছাপিয়ে নিজেদের দেশ বাংলদেশ-কে ভালোবেসে যেতে চেয়েছিলো । নিরাপত্তাহীনতার কথা চিন্তা করে মায়া এবং কিরনময়ী বহুবার সুধাময় এবং সুরঞ্জন কে আবেদন জানিয়েছিলো দেশত্যাগ করে 'ইন্ডিয়া'-তে চলে যাওয়ার । দেশপ্রেম এর উর্দ্ধে গিয়ে সুধাময় ও সুরঞ্জন কখনই কোনো কিছুকে গুরুত্ব দিতো না । তাঁদের মতে পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তাহীনতার কোনো প্রশ্নই স্বদেশে সম্ভব নয় এবং তাঁরা মনে করতো নারীদের বিপদ যেকোনো দেশেই হতে পারে । কিন্তু, সেইবার রাজনৈতিক দাঙ্গার আগুনে পুড়তে বসেছিলো সুধাময়ের পরিবার । যার ফলস্বরূপ মানবতাবাদী সুরঞ্জন ধীরে ধীরে কম্যুনাল হয়ে উঠতে থাকে ।
মূলত, লেখিকা এখানে রাজনৈতিক দাঙ্গার অন্তরালে থাকা কমিউনিজম এবং দুই ভিন্ন জাতির জাতিবিদ্বেষ-কে এই উপন্যাসে বিভিন্ন ভয়াবহ এবং নৃশংস ঘটনার দ্বারা তুলে ধরতে চেয়েছেন, যা পড়লে সত্যিই হয়তো মানবতাবাদকে এক ক্ষয়িষ্ণু সম্পদরূপে আবিষ্কার করা যায় ।
বি.দ্র: এই লেখার কোনো অংশই কোনো জাতি, ধর্ম, ব্যক্তি বা ব্যক্তিচিন্তা-কে আঘাত করে না। পুরো কাহিনী জানতে হলে অবশ্যই উপন্যাসটি পড়ুন।।
©মাম্পি মল্লিক
আমার লেখা আরো কিছু বাংলা কবিতা ও লেখা যেগুলো আপনার ভালো লাগতে পারে:
0 মন্তব্যসমূহ